রাজধানীর উত্তরা এলাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন কলেজের পাশে একটি ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। উদ্ধার তৎপরতায় জড়িত সশস্ত্র বাহিনীর একটি ইন্টেলিজেন্স সূত্র দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছেই। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, আগামী ৩ থেকে ৭ দিনের এবং ক্ষেত্রেবিশেষে এক মাসের মধ্যে এই প্রাণহানি শতাধিক হতে পারে। ওই সূত্রটি বলছে, জেট বিমানটি ভবনের এক পাশ দিয়ে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। আর ঘটনাস্থলে যেহেতু অধিকাংশ ভিক্টিমই শিশু-কিশোর; তাই তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম। সে হিসেবে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়ার শঙ্কা বেশি।
প্রত্যক্ষদর্শীরাও জানিয়েছেন, উদ্ধার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রাণহানির সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ সম্ভব নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনায় শিশুদের ফ্লুইড লস এবং ইনফেকশনের ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই মৃত্যুর সংখ্যা এখনই বলা যাবে না।
আজ সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ যুদ্ধবিমান কলেজ ভবনে সরাসরি বিধ্বস্ত হয় বিমানটি। এখন পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পক্ষ।
সুত্র জানায়, দুর্ঘটনার সময় ভবনটিতে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী ক্লাস করছিলেন, পাশাপাশি আশেপাশের এলাকায়ও অনেক সাধারণ মানুষ অবস্থান করছিলেন। বিধ্বস্ত হওয়ার পর যুদ্ধবিমানের জ্বালানিভর্তি ফুয়েল ট্যাঙ্ক থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে ভবনসহ আশেপাশের এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি হয়। ঘটনায় এখন পর্যন্ত আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক; যাদের মধ্যে অনেকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ, উত্তরা আধুনিক হাসপাতালসহ রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এদিকে দুর্ঘটনার পর থেকেই অনেক শিক্ষার্থী নিখোঁজ রয়েছেন। আতঙ্কগ্রস্ত অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের খোঁজে হাসপাতাল ও আশপাশের এলাকায় ছুটছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতোমধ্যেই নিখোঁজদের ছবি পোস্ট করে অনেকে সাহায্য চেয়েছেন।
সায়ের নামে এক নিখোঁজ শিক্ষার্থীকে খুঁজছেন বাবা সেলিম জাহিদ। তিনি প্রথম আলো পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত রয়েছেন বলে জানা গেছে। পোস্টে সেলিম জাহিদ লেখেন, ‘আমার সায়েরকে এখনো খুঁজে পাচ্ছি না। ও মাইলস্টোনের মেইন ক্যাম্পাসে ছিল। বিমানটা ঠিক যেখানে ক্রাশ করেছে।’ মাইলস্টোন স্কুলের বাংলা ভার্সনের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাতেমার পিতা লিয়ন মির সন্তানের খোঁজ চেয়ে আহাজারি করছেন। ফেসবুক লাইভে এসে তিনি সন্তানের সন্ধান চেয়েছেন। সর্বশেষ পাওয়া তথ্যমতে, তাকে খুঁজে পাওয়া গেছে।
জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আবাসিক চিকিৎসক শাওন বিন রহমান জানান, হতাহতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
এদিকে দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাইলটসহ ১৯জন নিহত হয়েছেন। দগ্ধ হয়েছেন আরও ১৬৪ জন। দগ্ধদের মধ্যে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি ৩৬ জনের পরিচয় মিলেছে। দগ্ধরা হলেন— ১.শামীম ইউসুফ (১৪) ২. মাহিন(১৫) ৩. আবিদ(১৭) ৪. রফি বড়ুয়া (২১) ৫. সায়েম (১২), ৬.সায়েম ইউসুফ (১৪), ৭. মুনতাহা (১১), ৮. নাফি (১০), ৯. মেহেরিন (১২), ১০.আয়মান (১০), ১১. জায়েনা (১৩), ১২.ইমন (১৭), ১৩. রোহান(১৪), ১৪.আবিদ (০৯), ১৫.আশরাফ (৩৭), ১৬.ইউশা (১১), ১৭.পায়েল (১২) ১৮.আলবেরা (১০), ১৯.তাসমিয়া (১৫), ২০.মাহিয়া (১৩), ২১.অয়ন (১৪), ২২.ফয়াজ (১৪), ২৩.মাসুমা (৩৮), ২৪. মাহাতা (১৪), ২৫.শামীম (১৭), ২৬.জাকির (৫৫), ২৭.নিলয় (১৪), ২৮.সামিয়া ( ১৪), ২৯. আরিয়ান (১২) ৩০. তৌফিক (১৩), ৩১. নূসরাত (১৩), ৩২.তানভীর আহমেদ(১৩) (নিহত) ঢাকা মেডিকেলে দগ্ধ চারজন: তারা হলেন- রাইয়ান (১৪), জুনায়েদ (১১) (নিহত), জারিফ(১২), সবুজা বেগম (৪০)।
সোমবার বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় আইএসপিআর জানিয়েছে, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে আহত ৮; বার্ন ইনস্টিটিউটে আহত ৭০, নিহত ২; সিএমএইচ-ঢাকায় আহত ১৪, নিহত ১১; কুর্মিটোলা জেনারেল হসপিটালে আহত নাই, নিহত ২; লুবনা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টার, উত্তরায় আহত ১১, নিহত ২; উত্তরা আধুনিক হসপিটাল আহত ৬০, নিহত ১; উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে আহত ১, নিহত নেই।
প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইউনিট এখনো ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ঘটনাটি কেন ঘটেছে, কীভাবে যুদ্ধবিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারাল, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, উড্ডয়নের সময় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে।
ঘটনার পর থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এ ঘটনায় আগামীকাল মঙ্গলবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া দ্রুত উদ্ধার তৎপরতা ও চিকিৎসা সহায়তার নির্দেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।