Sunday, July 27, 2025

দুই ভাইয়ের এক বউ, চাঞ্চল্য

আরও পড়ুন

ভারতের হিমাচল প্রদেশে এক নারীকে বিয়ে করেছেন দুই ভাই। বিয়েতে উপস্থিত হয়েছিলেন গ্রামের শত শত মানুষ । ঘটনাটি ঘটেছে প্রদেশের সিরমাউর জেলার ট্রান্স-গিরি অঞ্চলের শিল্লাই গ্রামে। হাট্টি উপজাতির দুই ভাই সেখানে একই নারীকে বিয়ে করেছেন। বহুপতি প্রথা বা বহুগামিতার অধীনে এই বিয়ে হয়। এ বিয়ে স্থানীয়ভাবে পরিচিত ‘জোড়িদারা’ নামে। বিয়ের কনে সুনীতা চৌহান। তার বর দুই ভাই হলেন প্রদীপ নেগি ও কপিল নেগি। তারা জানান, কোনো চাপ ছাড়াই তারা স্বেচ্ছায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ১২ জুলাই শুরু হওয়া তিন দিনের এই বিয়েতে স্থানীয় লোকগীতি ও নৃত্য অনুষ্ঠান উৎসবের রূপ নেয়। বিয়ের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন এনডিটিভি।

হিমাচল প্রদেশের রাজস্ব আইন এই প্রাচীন উপজাতি প্রথাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। শুধু ট্রান্স-গিরির বাদহানা গ্রামেই গত ছয় বছরে এমন পাঁচটি বিয়ে হয়েছে। সুনীতা কুনহাট গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বলেন, এই প্রথা সম্পর্কে আমি জানতাম এবং নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা যে বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি, তা আমি সম্মান করি।

আরও পড়ুনঃ  দোকানে গিয়ে পণ্য চুরি, ভারতীয় নারী গ্রেফতার

প্রদীপ শিল্লাই গ্রামের সরকারি দপ্তরের কর্মচারী। তিনি বলেন, আমরা প্রকাশ্যে এই প্রথা পালন করেছি। কারণ আমরা এতে গর্বিত। এটি আমাদের যৌথ সিদ্ধান্ত। ছোট ভাই কপিল বিদেশে কাজ করেন। তিনি যোগ করেন, আমি হয়তো বাইরে থাকি। কিন্তু এই বিয়ের মাধ্যমে আমরা স্ত্রীর জন্য ভালোবাসা, সমর্থন ও স্থিতি নিশ্চিত করছি ঐক্যবদ্ধ পরিবার হিসেবে।

হাট্টি উপজাতি হিমাচল-উত্তরাখণ্ড সীমান্তের একটি সম্প্রদায়। তাদের তিন বছর আগে তফসিলি উপজাতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই উপজাতিতে বহুপতি প্রথা চালু ছিল। তবে নারীদের সাক্ষরতার হার বৃদ্ধির সঙ্গে এবং অর্থনৈতিক উন্নতির কারণে এমন বিয়ে কমে গেছে। এখনো কিছু গ্রামে গোপনে এ ধরনের বিয়ে হয় এবং সমাজে তা মেনে নেয়া হয়। তবে তার সংখ্যা খুবই কম, জানান স্থানীয় প্রবীণরা।

আরও পড়ুনঃ  হিজড়া সেজে ২৮ বছর ভারতে, ধরা পড়লেন ‘বাংলাদেশি যুবক

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রথার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল পারিবারিক কৃষিজমি বিভক্ত হওয়া রোধ করা। আজও উপজাতি নারীদের পৈতৃক সম্পত্তিতে অংশ নিয়ে সমস্যা থাকে। প্রাচীনকালে পরিবারের জমি অক্ষত রাখতে ও যৌথ পরিবারের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও বোঝাপড়া বজায় রাখতে এমন বিয়ে চালু হয়েছিল।

কেন্দ্রীয় হাট্টি সমিতির সাধারণ সম্পাদক কুন্দন সিং শাস্ত্রী বলেন, হাজার বছর আগে পরিবারের কৃষিজমি টিকিয়ে রাখতে এই প্রথার জন্ম হয়েছিল। এছাড়া বড় পরিবার মানে বেশি নিরাপত্তা, পাহাড়ি দুর্গম এলাকায় বিচ্ছিন্ন কৃষিজমির যত্ন ও চাষাবাদে পরিবারের উপস্থিতি জরুরি।

আরও পড়ুনঃ  একই পরিবারের ৫ সদস্যের রহস্যজনক মৃত্যু

হাট্টি সম্প্রদায়ের প্রায় তিন লাখ মানুষ সিরমাউরের ট্রান্স-গিরি অঞ্চলের ৪৫০টি গ্রামে বাস করেন। সেখানে কিছু গ্রামে এখনো এই বহুপতি প্রথা দেখা যায়। একইভাবে উত্তরাখণ্ডের জৌনসার বাবর উপজাতি অঞ্চল ও হিমাচলের কিন্নৌর জেলাতেও একসময় এ প্রথা প্রচলিত ছিল। এই অনন্য উপজাতি প্রথাকে ‘জাজদা’ নামেও ডাকা হয়। বিয়ের দিনে কনে বরপক্ষের গ্রামে শোভাযাত্রায় আসেন এবং বরবাড়িতে ‘সিন্জ’ নামের এক আচার হয়। স্থানীয় ভাষায় মন্ত্রপাঠ, পবিত্র জল ছিটানো, শেষে গুড় খাওয়ানো ও কুলদেবতার আশীর্বাদে তাদের দাম্পত্য জীবনে মধুরতা কামনা করে অনুষ্ঠান শেষ হয়।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ